লেখার টাইটেলটা কিছুটা শিবরাম চক্রবর্তির গল্পের টাইটেলের মত মনে হতে পারে। গল্পই বটে, জীবন্ত গল্প। ঘটনাটি শুরু থেকেই বলি। তা নাহলে আবার বলবেন শুরুটাতো শুনলাম না।
২০০৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ইন্টারনেট লাইনের গতি এতই ধীর হয়ে গেল যে প্রতিদিনই মেজাজ গরম থাকতো। বউয়ের সাথেও মেজাজ খারাপ করতাম। কিছু দিন পরে পোস্ট পেইড সীম কিনলাম একটা। এবার কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলাম। প্রিপেইড দিয়ে কাস্টমার কেয়ারে কথা বলে মজা নেই। খালি বুকের মধ্যে ধুক ধুক করে কখন ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়। পোস্ট পেইড দিয়ে অভিযোগ করতে থাকলাম দু দিন পর পর।
প্রতিদিন নতুন একজন কাস্টমার ম্যানেজারের সাথে কথা হয়। বলে- আপনার অভিযোগটি রাখছি, আশা করি শিঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে। এক মাস পরে ইন্টারনেট লাইনের গতি আবার আগের মত হলো। ভালই স্পীড। ২০ কিলো বাইট থেকে ২৫ কিলো বাইট। কাস্টমার কেয়ার থেকে একজন ফোন করে জিজ্ঞেস করলো- স্যার আপনার ইন্টারনেট সমস্যা সমাধান হয়েছে? আমি বললাম, জী হয়েছে। লোকটার কাছে আরো জানতে পারলাম আমার এলাকার বিটিএস টাওয়ারে নাকি একটা নতুন ডিভাইস বসানো হয়েছে। তারই ফল সরূপ আমি ভালো স্পীড পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ।
ওমা, দুদিন পর থেকে দেখি আরেক সমস্যা। হঠাৎ হঠাৎ ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ভাবলাম আমার সেটের সমস্যা। আমার বন্ধুদের কয়েকটা সেট দিয়ে চেষ্টা করলাম। নাহ, সেটে সমস্যা না। কম্পিউটার এবং অপারেটিং সিসটেম পরিবর্তন করে দেখলাম। নাহ, সেটাও ঠিক আছে।
এবার স্থান পরিবর্তন করে দেখলাম। আমি থাকি গাজীপুরে। ঢাকায় ডিসকানেক্ট সমস্যা নেই। মোহাম্মাদপুরে, গুলশানে, যাত্রাবাড়ীতে কোনো সমস্যা নেই। নাখাল পাড়ায় ডিসকানেক্ট সমস্যা আছে। নাখাল পাড়ায় একদিন ৭/৮ ঘন্টার মত ছিলাম।
এবার শিওর হলাম সমস্যাটা আমার কম্পিউটার কিংবা সেটের নয়। নেটওয়ার্কের সমস্যা। কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলাম। এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখে। ওরা আমাকে মোবাইল সেট পরিবর্তন করতে বলল, সফ্টওয়্যার নতুন করে সেটাপ দিতে বলল, ক্যাবল পরিবর্তন করতে বলল, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি একটা একটা করে আবারো করলাম। দুদিন পর পর আবারো আগের অভিযোগের কথা বলি। প্রতিদিন নতুন নতুন কাস্টমার ম্যানেজারের সাথে কথা হয়। প্রত্যেকেই একই কথা বলতে চায়। আমি বলি ভাই, এগুলো করেছি, নতুন কিছু আছে কিন সেটা বলেন। নাহ, কিছুতেই কিছু হয় না। বন্ধুদের সাথেও আলাপ করতে বাকি রাখি না। কোডার ভাইও বলে আমার সেটে সমস্যা।
অবশেষে কাস্টমার কেয়ার থেকে অভিযোগটি নেটওয়ার্ক টীমের কাছে হস্তান্তর হয়। নেটওয়ার্ক টীমের একজন আমাকে ফোন করে সেটের সফটওয়ার নতুন করে ইন্সটল করতে বলে, ওএস ইন্সটল করতে বলে। আমি বলি- ভাই, এতদিন পর এই কথা শোনানোর জন্য আপনি ফোন করেছেন? বেচারা একটু নাখোশ হয় আমার উপর। দু দিন পর পর আমার ফোন চলতেই থাকে। ওরা থেমে গেলেও আমি থামি না।
একদিন আমার বাসায় এক লোক আসে গ্রামীণফোন থেকে। এসে বলে- আপনি ইন্টারনেট লাইন স্লো পাচ্ছেন, এরকম একটি অভিযোগ আছে । আমি সেটা পরীক্ষা করতে এসেছি।
আমি মনে মনে বলি- মাটি তুই ফাঁক হ, আমি ভিতরে ঢুইকা যাই। কাস্টমার ম্যানেজারদের সাথে যতবার কথা হয়েছে, আমি বার বার বলে দিয়েছি আমার ইন্টারনেট লাইন স্লো না। সমস্যা হচ্ছে বার বার ডিসকানেক্ট হয়ে যায়।
লোকটা বলল- আমি যে অভিযোগ নিয়ে এসেছি সেটা ছাড়া অন্য অভিযোগের পরীক্ষা করার জন্য আমি প্রস্তুত না।
কি আর করা। কিছুক্ষণ থেকে লোকটা চলে গেল। বলে গেল- আপনার অভিযোগ আমি কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
আবার আমার ফোন করার পালা শুরু। কাস্টমার কেয়ারে দু দিন পর পরই ফোন করি। আমার ধৈর্য আছে বলা যায়। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায় আমার ইন্টারনেট লাইনের তাতে কিছু যায় আসে না। আমিও নাছোড় বান্দা। দু দিন পর পর ফোন করি আর কাস্টমার ম্যানেজারদের কাছ থেকে আশ্বাসের বানী শুনি। অনেকেই মনে মনে ভাবছেন মেয়ে কাস্টমার ম্যানেজারদের সাথে কথা বলতে ভালই লাগে। নাহ, ইন্টারনেট টীমে কোনো মেয়ে কাস্টমার ম্যানেজার নেই মনে হয়। আমি পাইনি। একদিন এক কাস্টমার ম্যানেজার বললেন- আপনার অভিযোগের সমাধান ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পেয়ে যাবেন, অথবা আমাদের পক্ষ থেকে জানানো হবে কতদিন লাগবে এই সমস্যা সমাধান করতে। নাহ, বেশ কয়েকটা ৪৮ ঘন্টা চলে গেল। কিন্তু ফোনও আসলো না, আমার সমস্যা সমাধানও হলো না। আমি বট বৃক্ষের মত ধৈর্যশীল, আবার ফোন করি।
একদিন সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত দেখি একবারও ডিসকানেক্ট হলো না। আগস্ট মাসের ৪/৫ তারিখ হবে আমার ঠিক মনে নেই। আমি মনে মনে প্রভুকে ধন্যবাদ দেই। আবার ভাবি এত তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে গেল? হ্যাঁ তাইতো দেখি, ডিসকানেক্ট হয় না। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত ৩ বার ডিসকানেক্ট হয়েছে।
আমি আল্লহকেই ধন্যবাদ দেই। গ্রামীণফোনকে নয়। ৪ মাস পর ডিসকানেক্ট সমস্যার সমাধান পেয়ে গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে না।
Leave a Reply